থ্যালাসেমিয়া পার্ট ২: চিকিৎসা

সর্বশেষ সম্পাদনা: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, দুপুর ০৩:০২

এই প্রবন্ধটি ৫টি প্রবন্ধের একটা সিরিজ। প্রথম প্রবন্ধতে আমরা প্রাথমিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এটা না দেখে থাকলে দেখে নিতে পারেন। এখানে ক্লিক করুন- থ্যালাসেমিয়া পার্ট ১ঃ একটি জন্মগত/বংশগত রক্তস্বল্পতা

এই প্রবন্ধে আমরা থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব।

এই রোগের কি কোন চিকিতসা আছে?

আছে।

সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা  হল অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এটা এখনো চালু হয়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সীমিত আকারে অস্থিমজ্জা চালু হয়েছে কিন্তু সেটা থ্যালাসিমিয়ার জন্য নয়। যদি সঠিকভাবে করা যায় তবে প্রায় ৯১% রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয় এবং পরবর্তীতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, সিংগাপুরে এই চিকিতসা চালু আছে।

বাংলাদেশে এর চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে নিচের পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়-

১। রক্ত পরিসঞ্চালন (blood transfusion)

২। রক্ত থেকে রক্তের লৌহ পরিশোধণ (iron chelation)

৩। কিছু ঔষধ

৪। খাবারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম

৫। অপারেশনের মাধ্যমে প্লীহা কেটে ফেলে দেয়া (splenectomy)

রক্ত পরিসঞ্চালন

১। নিয়মিত রক্তপরিসঞ্চালনের মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখা জরুরী। এর ফলে থ্যালাসেমিয়ার কারণে ঘটা বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তন রোধ করা যায়। যেমন- চেহারার পরিবর্তন।

২। নিজের নিকট আত্বীয়দের কাছ থেকে রক্ত না নেয়া। নিলে পরবর্তী সময়ে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করার সময় জটিলতা তৈরী হয়।

৩। তাজা রক্ত দিতে পারলে ভালো। কারণ লোহিত রক্ত কনিকা সাধারণত ১২০ দিন বাচে। ফলে, যত পুরানো রক্ত দেয়া হবে, শিশুর শরীরে তত কম সময় টিকবে। এবং কিছুদিন পর আবার রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন পড়বে।

৪। রক্ত দাতাদের একটা দল তৈরী করতে পারলে ভালো হয়। নিজের এলাকার ১৫-২০ জন লোককে নিয়মিত রক্ত দানের জন্য তৈরী করতে পারলে রক্ত পাওয়া নিয়ে সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।

রক্ত থেকে রক্তের লৌহ পরিশোধণ

থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্তের লোহিত রক্ত কনিকা ক্রমান্বয়ে ভেঙে যেতে থাকে৷ ফলে, বর্জ্য পদার্থ হিসেবে লৌহ জমা হয়। এতে বিভিন্ন অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।  এজন্য নিয়মিতভাবে এই অতিরিক্ত লৌহ শরীর থেকে বের করতে হয়| এজন্য সাধারনত তিন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। Desferioxamine, deferiprone এবং deferasirox. প্রথমটি ইঞ্জেকশন আর বাকী দুইটা মুখে খাওয়ার ঔষধ ৷

Desferioxamine

ঔষধ

কিছু ঔষধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের মূল উদ্দেশ্য হলো রক্ত কনিকা ভেঙ্গে যাওয়ার হার কমানো। হাইড্রক্সিইউরিয়া এমনই একটি ঔষধ। বাজারে হাইড্রনিক্স নামে পাওয়া যায়। প্রতিদিন খেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে কয়েক মাস পর্যন্ত খেতে হতে পারে। প্রতিটা ৫০০ মিগ্রা ক্যাপসুলের দাম ১৫ টাকা।

Hydronix 500mg

পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা থ্যালাসিমিয়া রোগীর খাবার এবং প্লীহা কর্তন (splenectomy) সম্পর্কে আলোচনার আশা রাখি। এছাড়া এই সিরিজের অন্য লেখাগুলোও পড়তে পারেন।

থ্যালাসেমিয়া পার্ট ৩ঃ খাবার ও প্লীহাকর্তন (splenectomy)

থ্যালাসেমিয়া পার্ট ৪ঃ প্রতিরোধ

থ্যালাসেমিয়া পার্ট ৫ঃ খাবারের তালিকা 

 

 

10 thoughts on “থ্যালাসেমিয়া পার্ট ২: চিকিৎসা”

  1. Cap.thalidomide কি কাজ করে,আমার থ্যালাসেমিয়া রোগিকে দিছে।

    Reply
    • আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ

      সাধারণত মানুষের রক্তের লোহিত রক্ত কনিকা (RBC) এর মধ্যে হিমোগ্লোবিন থাকে। প্রতিটা হিমোগ্লোবিনের ২টা আলফা, আর ২টা বিটা চেইন থাকে (অর্থাৎ সমান সমান থাকে)। বিটা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের বিটা চেইন কম তৈরি হয়। তখন বিটা চেইন কম থাকায় আলফা চেইন রক্তকনিকার মধ্যে জমে যায়। এর প্রভাবে রক্ত ভেংগে যায়। থ্যালিডোমাইড দিলে আরেকটা চেইন (এর নাম গামা) তৈরি হয়। এই চেইনটা তখন অতিরিক্ত আলফা চেইনগুলোর সাথে যুক্ত হয়। ফলে, রক্ত ভেংগে যাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। যে পরিমাণ রক্ত নিয়মিত রোগীকে দিতে হতো সেটার পরিমাণ কমে আসে।

      Reply
  2. অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনে ব্যায় কত,রোগির বয়স ১১বছর মেয়ে।

    Reply
    • বেসরকারি খাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ১৪-১৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা যাবে। তারা মার্চ, ২০২২ এর পর থেকে শুরু করবে বলে জানিয়েছে। বিস্তারিত জানতে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া ঢাকা সিএমএইচ-এ অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। খরচ ও আনুসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য এই মুহুর্তে আমার জানা নাই।

      Reply
  3. দয়া করে জানাবেন কি? অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করাতে চাইলে, বাংলাদেশের কোথায় করানো সম্ভব হবে। যদি কোনো বিস্তারিত তথ্য জানাতেন খুবই উপকৃত হতাম।

    Reply
    • আমার জানামতে এভারকেয়ার হাসপাতালে (প্রাক্তন এপোলো হাসপাতাল) অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে।

      Reply
  4. আমার স্ত্রীর এই রোগ আছে, আমি এক ডক্টর এর পরামর্শে হাইড্রনিক্স ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু আমার স্ত্রী ওষুধ খায়ার পরে সারাদিন কোন খাবার খেতে পারে না বমি করে। দোয়া করে পরামর্শ দেন

    Reply
    • ঔষধটি খাওয়ার পর খেলে অনেকের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়। এছাড়া ডোজ কমানো বা অন্য কোন ঔষধ যোগও করা লাগতে পারে। আপনার স্ত্রীর চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

      Reply

Leave a Comment