থ্যালাসেমিয়া সংক্রান্ত ৫টি প্রবন্ধের সিরিজের এটি ৩য় অংশ। এখানে থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার ও চিকিৎসার অংশ হিসেবে প্লীহাকর্তন (splenectomy) নিয়ে আলোচনা করবো। আগের অংশ গুলো পড়তে চাইলে নিচের পছন্দের লিংকে ক্লিক করুন।
থ্যালাসেমিয়া পার্ট ১ঃ একটি জন্মগত/বংশগত রক্তস্বল্পতা
থ্যালাসিমিয়া রোগীর খাবার হচ্ছে মূল চিকিৎসার অংশ। রোগীকে সারাজীবন খাবারের নিয়মগুলো মেনে চলতে হয়। আর প্লীহা কর্তন হচ্ছে শেষ উপায়ের মত। এই প্রবন্ধে খাবার এবং প্লীহা কর্তন সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করবেন। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
থ্যালাসিমিয়া রোগীর খাবার
থ্যালাসিমিয়া রোগীর খাবার নিয়ে বাবা-মাএর সবসময় চিন্তা থাকে। কি খাওয়াবো আর কি খাওয়াবো না বা এটা নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকেন। বিশেষ করে যে সকল মা-বাবার শিশু নতুন করে থ্যালাসিমিয়া রোগী হিসেবে সনাক্ত হয়েছে। কিন্তু থ্যালাসিমিয়া আক্রান্ত শিশু প্রায় সব রকম খাবারই খেতে পারবে। শুধুমাত্র অল্প কিছু খাবার বেছে খেতে হবে।
১। প্রথমেই লাল গোস্ত (গরুর বাঁ খাসির), কলিজা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এ খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমানে লৌহ থাকে। ফলে, শরীরে লৌহ জমে যাওয়ার পরিমান বৃদ্ধি পায়।
২। এছাড়াও অন্য যে সমস্ত খাবারে লৌহ বেশি থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
৩। ভিটামিন সি আছে এমন খাবার(যেমন- লেবু, আমলকি, কাচামরিচ ইত্যাদি) এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এ খাবারগুলো লৌহ শরীরে বেশি বেশি প্রবেশ করে। তবে, লৌহ পরিশোধনের সময় এ খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে। এতে পরিশোধণ ভালো হয়। তবে তা শুধু লৌহ পরিশোধনের সময়।
৪। যে সমস্ত খাবারের কারণে লৌহ পরিশোষণ কম হয় সেগুলো খাওয়ার পর খাওয়া যেতে পারে। যেমন- চা, কফি ইত্যাদি।
খাবারের বিস্তারিত তালিকা দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
মনে রাখতে হবে কোন অবস্থাতেই রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা হিসেবে এই শিশুকে কখনই লৌহ বা আয়রন ট্যাবলেট দেয়া যাবে না।
প্লীহাকর্তন(splenectomy)
অপারেশন করে প্লীহা বা spleen কেটে ফেলা থ্যালাসিমিয়া রোগীর শেষ পর্যায়ের চিকিৎসা। প্লীহা হচ্ছে সেই অংগ যেখানে লোহিত রক্ত কনিকাগুলো ভেঙ্গে যায়। প্লীহা কেটে ফেলে দেয়ার ফলে এই ভেঙ্গে যাওয়ার হার কমে যায়। ফলে, রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন কমে যায়। কিন্তু সব রোগীর ক্ষেত্রেই এটা করা যায় না।
সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে প্লীহাকর্তন করা হয়ঃ
১। যখন এত বেশি পরিমাণ রক্ত প্রয়োজন হয় যে রক্ত জোগাড় করা সম্ভব হয় না।
২। প্লীহা এত বড় হয়ে যায় যে শিশুর জন্য কষ্টের কারণ হয়ে যায়।
প্লীহা কর্তনের পূর্বে কিছু শর্ত পূরণ হতে হয়ঃ
১। রোগীর বয়স কমপক্ষে ৫ হতে হয়।
২। নির্দিষ্ট কিছু টীকা দিয়ে নিতে হয়।
অপারেশনের পরও কিছু নিয়ম সারাজীবন মেনে চলতে হয়।
কাজেই, এই বিষয়টা জটিল এবং প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা। এজন্য, বিষয়টা ডাক্তারের উপরই ছেড়ে দিতে হবে।
থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে আমাদের বাকী লেখাগুলো নিচে দেয়া লিংক থেকে পড়তে পারেন।
থ্যালাসেমিয়া পার্ট ৪ঃ প্রতিরোধ
থ্যালাসেমিয়া পার্ট ৫ঃ খাবারের তালিকা
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
বর্তমানে এমডি(শিশু) শেষ করার পর শিশু বিভাগে কর্মরত আছেন।
আসসালামু আলাইকুম স্যার ,
আমার সধর্মিণী গুরুতর ভাবে থ্যালাসেমিয়া তে আক্রান্ত
বিটা
তার স্বাস্থ্যের ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে । তার বয়স প্রায় ২৫ বছর কিন্তু দেখে ১৩ / ১৪ বছর মওনে হয় তার পেট ফুলে বর হয়ে গিয়েছে, পেটে খুব বেথার কথা বলে
আর বলে যে কিছু একটা পেটের উপরের দিকে উঠে বুকে আটকে জায় , নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় খুব
আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ মারাত্মক ভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি
বুকের উপর কি উঠে আসছে আর কিভাবে এর প্রতিকার ?
ওয়ালাইকুমুসসালাম। প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার আর্থিক অবস্থা ভালো না হলে নিকটবর্তী কোন সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বা হেমাটোলজী বিভাগে ভর্তি করাতে পারেন। সম্ভবত তার প্লীহা (spleen) অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। অপারেশন করা হলে শ্বাসকষ্ট কমতে পারে। এছাড়া থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অনেকসময় রক্তস্বল্পতা থেকে হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। আরো বেশ কিছু কারণে এমনটা হতে পারে। মূলকথা, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে মূলসমস্যা সনাক্ত করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। সরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড়ের কারণে থাকতে কষ্ট হয়, অনেক ক্ষেত্রে সময়ও লাগে। তবে, অল্প খরচে চিকিৎসার জন্য এর কোন বিকল্প নাই।
আপনি থ্যালাসেমিয়ায় ফাউন্ডেশনেও যোগাযোগ করে সহায়তার জন্য চেষ্টা করতে পারেন– ৩০, চামেলিবাগ, শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭। ফোন নম্বর- ০২৮৩৩২৪৮১ ইমেইল ঠিকানা: info@thals.org