মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার। এর মধ্যে শিশুর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সমস্ত খাদ্য উপাদান থাকে। কিন্তু অনেক সময়ই শিশু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পায় না। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করাই এর মূল কারণ। বিশেষ করে নতুন মায়েদের এই সমস্যা বেশি হয়। একারণে নবজাতকের কোলে নেয়ার (position) এবং বুকে দেয়ার পদ্ধতি(Attachment) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চাকে কিভাবে কোলে নিবেন?
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুকে সঠিকভাবে কোলে নিতে হয়। অন্যথায় শিশুর মধ্যে পড়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে বা অন্য কারণে অস্বস্তিতে ভোগে এবং নিশ্চিন্তে দুধ খেতে পারে না। নিচের ছবিতে দেখুন কিভাবে এই মা তার নবজাতককে কোলে নিয়েছেন। এটাই সঠিক পদ্ধতি। সঠিক পদ্ধতিতে নিচের বিষয়গুলো বজায় থাকে।


১। শিশুর মাথা মায়ের কনুইএর ভাজে থাকে।
২। শিশুর পাছা মায়ের হাতের তালুতে থাকে।
৩। শিশুর মাথা, পিঠ ও পাছা একই লাইনে থাকে এবং শিশুর শরীর মায়ের শরীরের সাথে লাগানো থাকে।
৪। মা শিশুর পুরো শরীরকে ধরে থাকে।
৫। দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর মুখ মায়ের স্তনের কাছে থাকে।
৬। শিশুর নাক মায়ের স্তনের বোটার ঠিক বিপরীতেই থাকে। যেন সহজেই শিশু মুখে নিয়ে নিতে পারে।
কিভাবে বাচ্চাকে মায়ের বুকে দিবেন?
কোলে নেয়ার পর গুরুত্বপুর্ণ হলো শিশুকে কিভাবে বুকে দেয়া হচ্ছে সেটা। সঠিক নিয়ম বুকে দিলে শিশু সহজে ও পর্যাপ্ত পরিমানে বুকের দুধ পায়।
১। শিশুর থুতনি মায়ের স্তনে লাগানো থাকবে।
২। শিশুর মুখ বড় করে হা করে থাকবে।
৩। শিশুর নিচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো থাকবে।
৪। স্তনের উপরের কালো অংশ নিচের অংশের চেয়ে বেশি দেখা যাবে।
নিচের ছবিতে দেখুন


১। শিশুর থুতনি মায়ের স্তনের সাথে লাগানো আছে।
২। শিশুর মুখ বড় করে হা করে আছে।
৩। শিশুর নিচের ঠোঁট বাইরের দিকে উল্টানো আছে। যদিও এই ছবিতে এটা স্পষ্ট না। তবে, সঠিক নিয়মে বুকে দিলে এমনটাই হওয়ার কথা।
৪। স্তনের এরিওলা বা কালো অংশের দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে উপরের কালো অংশ নিচের অংশের চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছ।
কিভাবে বুঝবেন শিশু বুকের দুধ পাচ্ছে কিনাঃ
শিশু বুকের দুধ পেলে সাধারনত শান্তভাবে খেতে থাকে। অনেক সময় হাত-পা নেড়ে খেলাধুলাও শুরু করে দেয়। অনেক সময় শিশুর ঢোক গেলার শব্দও মা শুনতে পান। এছাড়া লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে শিশুর গাল ফোলা আছে অর্থাৎ ডেবে যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, শিশু বুকের দুধ না পেলে অস্থির হয়ে যায়। জোড়ে জোড়ে টেনে দুধ খাওয়ার চেষ্টা করে। ফলে, গালদুটো ভিতরের দিকে দেবে যায়। এমনটা হলে খেয়াল করতে হবে উপরে দেখানো কোন নিয়মএর ব্যতয় ঘটছে কিনা। কোন ভুল পেলে শুধরে নিতে হবে। না বুঝলে স্বাস্থ্যকর্মী/ডাক্তার বা ল্যাকটেশন ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে থাকা নার্সের সহায়তা নিতে হবে।
মায়ের দুধের উপাদানের তারতম্যঃ


মায়ের বুকের দুধ তিন রকমের হতে পারে – শালদুধ (colostrum), প্রাথমিক দুধ (foremilk), শেষের দিকের দুধ (hindmilk)। শালদুধ শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক দিন আসে। এরপর স্বাভাবিক যে দুধটা আসে সেটাই দুই রকম হয় প্রারম্ভিক দুধ ও শেষের দুধ।
প্রথম দিকের বা প্রারম্ভিক দুধ (Foremilk): এই দুধ শেষের দুধের চাইতে পাতলা, এটা বেশি পরিমানে তৈরি হয়। এতে প্রচুর আমিষ, শর্করা এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে।
শেষের দুধ (Hindmilk): শেষের দুধ দেখতে সাদা হয় কারণ এতে অনেক চর্বি থাকে। এই চর্বি মায়ের দুধের বেশির ভাগ শক্তি সরবরাহ করে।
এই জন্যই শিশুকে একটি স্তনের সম্পূর্ণ দুধ খাওয়ানো শেষ করে পরের স্তনের দুধ খাওয়াতে হবে। যদি শিশুকে এক স্তনের দুধ সম্পূর্ণ না খাওয়ানো না হয় তাহলে পূর্ণ পুষ্টি পাবে না এবং শিশুর ওজন বৃদ্ধি হবে না।
ডাঃ ফাহিম আহমাদ ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। সরকারী বিধি অনুযায়ী দুই বছরের অধিক সময় গ্রামে কাজ করার পর শিশু রোগ সম্পর্কে উচ্চতর পড়াশুনা শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
বর্তমানে এমডি(শিশু) শেষ করার পর শিশু বিভাগে কর্মরত আছেন।
আসসালামুআলাইকুম।
আমি ৬৫ দিন বয়সী শিশুর মা।আমার বেবী পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কিনা এই নিয়ে খুব সন্দিহান থাকি।ডায়াপার পড়ানোর কারণে কতবার প্রস্রাব করে তা গুনতে পারিনা। দিনে ৫-৬ টি ডায়াপার চেঞ্জ করতে হয় ও এটিতে পর্যাপ্ত প্রস্রাব থাকে বলে মনে হয়।
চিন্তার বিষয়টি হলো,ও সবসময় শুধুমাত্র ৪-৭ মিনিট দুধ পান করে।এরপর খুব একটা কান্নাকাটি ও করে না।ওর সুস্থ আলহামদুলিল্লাহ্ কিন্তু হেলদি না।সেটা কি কম সময় ধরে দুধ খাওয়ানোর কারণে হচ্ছে?
এতো কম সময়ে কি বেবীর পেট ভরা সম্ভব?
এটা কি যথেষ্ট কিনা?
ধন্যবাদ।
আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ।
সাধারণত যথেষ্ট দুধ পেলে বাবু ৬-৮ বার প্রস্রাব করে। ৫-৬টি ডায়াপার সম্ভবত যথেষ্ট। ৬-৭ মিনিটেও বাবু যথেষ্ট দুধ পেতে পারে।
অন্য একটা বিষয় খেয়াল করতে পারেন। বাচ্চার ওজন বাড়ছে কিনা? জন্মের পর ৭ দিন ওজন কমে। এরপর ওজন আবার বাড়ে। ১০ দিনে জন্মের ওজনের সমান হয়। এরপর প্রতিদিন ২০-৩০গ্রাম করে বাড়ে। ৫ মাসে জন্মের ওজনের দ্বিগুন হয়, ১ বছরে ৩ গুন হয়। আপনার বাবুর ওজন কতটা বেড়েছে খেয়াল করুন।
যদি মনে হয় ওজন বাড়ছে না তাহলে একজন নবজাতক বা শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।